ঢাকার ইতিহাস খুব পুরনো না হলেও মসলিন এর ইতিহাস অনেক পুরনো ও দীর্ঘ। এক টুকরো কাপড় আংটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে নাড়াচড়া করা যেতো। ইবনে বতুতা তার কিতাবুর রেহালায় সোনারগাওয়ে তৈরি বস্ত্রের প্রশংসা করেন। রোম সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে অভিজাত রোমান নারীরা এই পোষাক পরিধান করত। অবশেষে , ১৭৫৭ সালে ইংরেজ বেনিয়ারা ক্ষমতায় আসলে , ইউরোপ এর সস্তা কাপড়ের সাথে বাজারে টিকতে না পেরে বিলীন হয়ে যায় এই মসলিন। ২০ শতকের প্রথম দিকে বিশ্ব থেকে হারিয়ে যায় ঢাকাই মসলিন।
২০১৪ সালের অক্টোবরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে ১৪ সদস্যের একটা কমিটি করা হয়। প্রথমে কোন নমুনাই বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না । অনেক চেস্টা করেও ঢাকা কোলকাতার মিউজিয়াম থেকে এর নমুনা সংগ্রহ করা যায় নি । তারপর লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়াম থেকে ঢাকাই মসলিন এর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ।
এই কাপড়ের সুতা তৈরি করা হয় ফুটি কার্পাস তুলা থেকে । লন্ডন থেকে প্রাপ্ত মসলিন এর ডিএনএ সিকুয়েন্স বের করে মিল করা হয় গাজিপুর এর কাপাসিয়া থেকে প্রাপ্ত ফুটি কার্পাস এর । মিল পাওয়ার পর সুতা কাটার জন্য প্রস্তুত করা হয় । মসলিন বোনার জন্য প্রায় ৫০০ কাউন্টের সুতা লাগে। এই জন্য কুমিল্লার চান্দিনায় সুতা চিকন করার প্রশিক্ষন দেওয়া হয় । এদের প্রশিক্ষন এর জন্য লেগে যায় প্রায় ২ বছর।নতুন করে এই সুতা কাটার জন্য চরকা তৈরি করেন মঞ্জুরুল ইসলাম ও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল ।
তারপর নারায়নগঞ্জ এ তাতি দিয়ে ১৭১০ সালে বোনা একটা শাড়ি দেখে বোনা হয় মসলিন শাড়ি। ইতিমধ্যে তাঁরা মোট ছয়টি শাড়ি তৈরি করেছেন। একটি শাড়ি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ঢাকাই মসলিন এর শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল ১৮৫০ সালে লন্ডন এ । ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাই মসলিনকে জিআই (ভৌগলিক-নির্দেশক) স্বত্বের অনুমোদন দেয়া হয়। ঢাকাই মসলিন হতে পারে অন্যতম অর্থনৈতিক রপ্তানিকারক পন্য।
লেখকঃ সাব্বির আহমেদ প্রিয়ম